ওযু আরবি শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, উজ্জ্বলতা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- শরীর পবিত্র করার নিয়তে পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার নামই ওযু।
ওযুর গুরুত্ব
ওযুর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
“যারা ইমান এনেছ জেনে রেখো, যখন তোমরা নামাযের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, তোমাদের দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসেহ করবে এবং উভয় পা গিরাসহ ধুয়ে নেবে।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)
ভালোভাবে ওযু করলে মন প্রফুল্ল থাকে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। ইবাদতেও একাগ্রতা আসে। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে চিনতে পারব।' জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, 'হে আল্লাহর রাসুল কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আপনি কীভাবে আমাদের চিনবেন?' নবি করিম (স.) উত্তরে বললেন, 'ওযুর ফলে আমার উম্মতের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় ঝক্কক্ করবে। তাতেই আমি আমার উম্মতকে চিনতে পারব।' (বুখারি ও মুসলিম)। কাজেই ওযুর ফজিলত বা মর্যাদা পাওয়ার আশায় আমাদের অতি উত্তমরূপে ওযু করতে হবে। ওযু পরিপূর্ণ হলে ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ের নামাযই পরিশুদ্ধ হয়। আর ওযু অপরিপূর্ণ হলে নামাযে পরিপূর্ণতা আসে না।
ওযুর নিয়ম
মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করে বিস্মিল্লাহ্ বলে প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুলি করতে হবে। এরপর নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক পরিষ্কার করতে হবে। তারপর তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল এমনভাবে ধৌত করতে হবে যাতে চুল পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে। দাড়ি ঘন হলে খিলাল করতে হবে। এরপর দুই হাত কনুইসহ ধৌত করতে হবে। হাতে ঘড়ি, আংটি ইত্যাদি থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন সবখানে পানি পৌঁছে যায়। তারপর দুই হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে। মাসেহ করার সময় পুরো দুই হাত দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পিছন দিকে ঘারসহ সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করতে হবে। তারপর দুই হাতের তালু পিছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করতে হবে। মাসেহ করার পর দুই পা টাখনু-সহ ভালো করে ধৌত করতে হবে যাতে একটু জায়গাও বাকি না থাকে। ওযুর কাজগুলো পরপর করে যেতে হবে। অর্থাৎ এক অঙ্গের পর অন্য অঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে ধৌত করতে হবে। অনেকক্ষণ থেমে থেমে করা যাবে না।
ওযুর ফরজ
ওযুর ফরজ চারটি। এ চারটির মধ্যে কোনো একটি বাদ পড়লে ওযু হবে না।
১. মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা।
২. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধোয়া।
৩. মাথার এক-চতুর্থাংশ একবার মাসেহ করা।
৪. উভয় পা গিরাসহ একবার ধোয়া।
ওযু ভঙ্গের কারণ
১. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে।
২. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়াও শরীরের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো অপবিত্র বস্তু বের হয়ে গড়িয়ে গেলে (যেমন: রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি)।
৩. থুথু, কাশি ব্যতীত বমির সাথে রক্ত, পুঁজ, খাদ্য অথবা অন্য কিছু বের হলে এবং মুখভর্তি বমি হলে।
৪. থুথুর সাথে বেশি পরিমাণ রক্ত এলে।
৫. চিত হয়ে, কাত হয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমালে।
৬. বেহুশ হলে।
৭. পাগল হলে।
৮. নেশাগ্রস্ত হলে।
৯. নামাযে অট্টহাসি হাসলে।
| কাজ : শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই শ্রেণিতে শিক্ষকের নির্দেশনায় ওযু করার উপকরণের মাধ্যমে অথবা প্রতীকী উপকরণের সাহায্যে ওযু করার নিয়ম অনুশীলন করবে। | 
Read more